দারস তৈরী করেছেনঃ আবু জারির
عَن الحارِثِ الْأَشْعَرِىِّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «اٰمُرُكُمْ بِخَمْسٍ : بِالْجَمَاعَةِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَالْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ وَإِنَّه مَنْ خَرَجَ مِنَ الْجَمَاعَةِ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِه إِلَّا أَنْ يُرَاجِعَ وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَهُوَ مِنْ جُثٰى جَهَنَّمَ وَإِنْ صَامَ وَصَلّٰى وَزَعَمَ أَنَّه مُسْلِمٌ». رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِىُّ
অনুবাদঃ
হজরত হারিস আল-আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন, আমাকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ দেয়া হয়েছে। আমিও তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি। তাহলঃ (১) জামায়াতবদ্ধ জীবন, (২) নেতার আদেশ শোনা, (৩) নেতার আদেশ মানা, (৪) ইসলামের প্রয়োজনে হিজরত করা এবং (৫) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। যে জামায়াত থেকে এক বিঘত পরিমাণ সরে গেল সে তার গলা থেকে ইসলামের রশিটা সরিয়ে ফেললো। যতক্ষণ না সে আবার জামায়াতবদ্ধ জীবনে ফিরে আসে। আর যে জাহিলিয়াতের দিকে মানুষকে আহ্বান করে তাকে জাহান্নামের খড়ি তৈরি করা হবে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সঃ)! সে যদি নামাজ পড়ে ও রোজা রাখে? রাসূল (সঃ) বললেন, সে যদি নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে এর পরও সে জাহান্নামি। (মুসনাদে আহমদ)
রাবি পরিচিতিঃ
নামঃ হারিস ইবনে হারিস আল-আশআরী আশ-শামী। কেউ কেউ
বলেছেন, হারিস আল-আশআরী আবু মালিক আল-আশ’আরী নামেও পরিচিত।
কুনিয়াতঃ তার কুনিয়াত হচ্ছে আবু মালিক। তিনি আবু মালিক
নামেই বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন।
জন্মস্থানঃ তার জন্মস্থান শাম দেশে। তিনি শাম দেশেই
বসবাস করতেন। সেখানে তার অনেক বন্ধুবর মানুষ ছিলেন। তিনি সবার কাছে অত্যন্ত
সম্মানের পাত্র ছিলেন।
হজরত হারিস আল-আশআরী বর্ণিত হাদিস সংখ্যা একটা। যে হাদিসকে জ্ঞানের মূল উৎস বলা হয়।
হাদিসের ব্যাখ্যাঃ
এটি হাদিসে কুদসি, যার কথা আল্লাহর, বর্ণনা রাসূল (সঃ) এর। এমন হাদিসকে হাদিসে কুদসি বলা হয় যা রাসূল (সঃ), আল্লাহর দিকে নিসবত করে উল্লেখ করেন, অর্থাৎ তিনি তা আল্লাহর কথা হিসেবে বর্ণনা করেন।
أَنَا
آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ بِالْجَمَاعَةِ
“হে
আমার সাহাবীরা আমি তোমাদের পাঁচটি বিষয়ের আদেশ দিচ্ছি যে আদেশ আল্লাহ আমাকে
দিয়েছেন। আর তাহলোঃ জামায়াতবদ্ধ জীবন যাপন করা।”
হাদিসের এ বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, প্রত্যেক
মুসলমানের জন্য ইসলাম পালন করার জন্য এবং আল্লাহর দ্বীন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ
ও রাষ্ট্রে কায়েম করার জন্য সংগঠন কায়েম করতে হবে। জামায়াত বা সংঘবদ্ধ হওয়া এটা
আল্লাহ তায়ালার হুকুম বা নির্দেশ। আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি হুকুম মেনে নেয়া ফরজ। আর
এ ফরজ মানার নামই হচ্ছে ইবাদত। সূরা আয যারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা
ঘোষণা করেছেন, ﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ
وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾ ‘নিশ্চয়ই আমি জ্বীন আর
ইনসান সৃষ্টি করেছি শুধু মাত্র আমার ইবাদতের জন্যে’।
জামায়াতবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ হওয়া যেহেতু আল্লাহ
তায়ালার হুকুম অতএব, এটা নিঃসন্দেহে ইবাদত।
মুসলিম মিল্লাতের জন্য ইসলামী সংগঠনভুক্ত থাকা ফরজ করা হয়েছে। আল-কুরআনে এ সংগঠনকে
‘আল্লাহর রজ্জু’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়ন
করার ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে এবং মতপার্থক্য করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ
جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
“আর
তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না।” (আলে-ইমরান: ১০৩)
আল্লাহ তায়ালার রজ্জু বলতে কুরআনে বর্ণিত
আল্লাহর মনোনীত ‘দ্বীন’ আল ইসলামকে অথবা আল কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ
তায়ালা আল্-কুরআন বা ‘দ্বীন আল ইসলাম’কে-ই সংঘবদ্ধ বা জামায়াতবদ্ধভাবে শক্ত করে ধারণ
করার নির্দেশ করছেন।
মানুষের মধ্যে মুসলিম জনগোষ্ঠী মূলত একটি
সংগঠন, জামায়াত বা Organization। সূরা বাকারার ১৪৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা
বলেছেনঃ
﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ
أُمَّةً وَسَطًا
لِّتَكُونُوا شُهَدَاءَ
عَلَى النَّاسِ
وَيَكُونَ الرَّسُولُ
عَلَيْكُمْ شَهِيدًا
ۗ وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ
الَّتِي كُنتَ عَلَيْهَا إِلَّا
لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسُولَ
مِمَّن يَنقَلِبُ
عَلَىٰ عَقِبَيْهِ
ۚ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً
إِلَّا عَلَى الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ ۗ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ
إِيمَانَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ
بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ
رَّحِيمٌ﴾
আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি, যাতে
তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী ৷
প্রথমে যে দিকে মুখ করে তুমি নামায পড়তে,
তাকে
তো কে রসূলের অনুসরণ করে এবং কে উল্টো দিকে ফিরে যায়, আমি
শুধু তা দেখার জন্য কিব্লাহ নির্দিষ্ট করেছিলাম ৷ এটি ছিল অত্যন্ত কঠিন বিষয়, তবে
তাদের জন্য মোটেই কঠিন প্রমাণিত হয়নি যারা আল্লাহর হিদায়াত লাভ করেছিল৷ আল্লাহ
তোমাদের এই ঈমানকে কখনো নষ্ট করবেন না ৷ নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, তিনি
মানুষের জন্য অত্যন্ত স্নেহশীল ও করুণাময়৷
সূরা আল হুজরাতের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ
তায়ালা বলেছেনঃ
﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ
إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا
بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ
ۚ وَاتَّقُوا
اللَّهَ لَعَلَّكُمْ
تُرْحَمُونَ﴾
মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই ৷ অতএব তোমাদের
ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও৷ আল্লাহকে ভয় করো, আশা
করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবানী করা হবে৷
সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে
উল্লেখ আছে, হজরত আবু নুমান বিন বশীর
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মু‘মিনদের
পারস্পরিক দয়া, ভালোবাসা ও সহানুভূতি মানব
দেহ সদৃশ। তার কোনো একটি অংশ রোগাক্রান্ত হলে সমগ্র দেহ নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে
আক্রান্ত হয়ে পড়ে’।
মুসলমানদের জন্য জামায়াত বা সংঘবদ্ধ জীবন
যাপন করা আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাওয়ার একটি উপায়। সূরা আল ইমরানের ১০১ আয়াতে
আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন,
﴿وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ
وَأَنتُمْ تُتْلَىٰ
عَلَيْكُمْ آيَاتُ
اللَّهِ وَفِيكُمْ
رَسُولُهُ ۗ وَمَن يَعْتَصِم
بِاللَّهِ فَقَدْ
هُدِيَ إِلَىٰ
صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾
তোমাদের জন্যে কুফরীর দিকে ফিরে যাবার এখন আর
কোন সুযোগটি আছে, যখন তোমাদের শুনানো হচ্ছে
আল্লাহর আয়াত এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর রসূল? যে
ব্যক্তি আল্লাহকে মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরবে,
সে
অবশ্যি সত্য সঠিক পথ লাভ করবে৷
তাছাড়াও সূরা আল ইমরানের ১০৪ ও ১১০ নম্বর
আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো ঘোষণা করেন,
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ
أُمَّةٌ يَدْعُونَ
إِلَى الْخَيْرِ
وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ
وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ
هُمُ الْمُفْلِحُونَ
আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা
কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং
মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।” (আলে-ইমরান: ১০৪)
﴿كُنتُمْ خَيْرَ
أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ
لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ
بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ
عَنِ الْمُنكَرِ
وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
ۗ وَلَوْ
آمَنَ أَهْلُ
الْكِتَابِ لَكَانَ
خَيْرًا لَّهُم
ۚ مِّنْهُمُ
الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ
الْفَاسِقُونَ﴾
এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের
কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য৷ তোমরা নেকীর হুকুম
দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো
এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷ এই আহলি কিতাবরা ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো হতো৷
যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার পাওয়া যায়, কিন্তু
তাদের অধিকাংশই নাফরমান৷ যারা সঙ্ঘবদ্ধভাবে আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। (আলে-ইমরান: ১১০)
الَّذِينَ تَابُوا
وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا
بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا
دِينَهُمْ لِلَّهِ
فَأُولَئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ وَسَوْفَ
يُؤْتِ اللَّهُ
الْمُؤْمِنِينَ أَجْرًا
عَظِيمًا
যারা তওবা করে নিজেদেরকে শুধরে নেয়, আল্লাহকে
দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং আল্লাহর জন্য নিজেদের দ্বীনকে খালেস করে, তারা
মুমিনদের সাথে থাকবে। আর অচিরেই আল্লাহ মুমিনদেরকে মহাপুরস্কার দান করবেন।” (সূরা
আন-নিসা: ১৪৬)
شَرَعَ لَكُمْ
مِنَ الدِّينِ مَا
وَصَّى بِهِ نُوحًا
وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ
وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ
إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى
أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ
وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে
বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন,
আর
আমি তোমার কাছে যে ওহি পাঠিয়েছি এবং ইবরাহিম,
মূসা
ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হলো,
তোমরা
দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না।” (সূরা শুরা : ১৩)
وَالسَّمْعِ
وَالطَّاعَةِ
“নেতার আদেশ শোনা এবং নেতার আদেশ মানা”
যখনই একটা দল বা সংগঠন তৈরি হবে তখন সেই
সংগঠন পরিচালনা করার জন্য একজন দায়িত্বশীল বা নেতা থাকবে। আর ঐ সংগঠনের সকল
জনশক্তি বা কর্মীরা ঐ দায়িত্বশীলের আনুগত্য করবে। শুধু সংগঠনই নয় যদি ছোট একটা
গ্রুপও কোথাও পাঠানো হয় তাহলেও সেই গ্রুপের জন্য একজন নেতা বা দায়িত্বশীল থাকতে
হবে। এ সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ
عَن اَبِى سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ
(رضـ) اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ (صـ) قَالَ: اِذَا خَرَجَ
ثَلَثَةٌ فِىْ سَفَرٍ فَلْيُؤَمِّرُوْا
اَحَدَهُمْ (ابو دَاود)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সঃ)
বলেনঃ সফরে একসঙ্গে তিনজন থাকেল তাদের মধ্যে একজনকে তারা যেন অবশ্যই আমীর বা নেতা
বানিয়ে নেয়। (আবু দাঊদ)
এই হাদীসের উপর আমরা বাস্তব আমল দেখতে পাই
তাবলীগ জামায়াতের ভাইদের মধ্যে। তারা যখন দাওয়াতী কাজে বের হন তখন তারা একজনকে
আমির মনোনীত করে নিয়ে তার নেতৃত্বে দাওয়াতী কাজ করেন। আবার ঢাকার রাস্তায় টহল
পুলিশ দেখা যায়। যারা তিনজন করে একত্রে
থাকে এবং তাদের মধ্যে একজন দল নেতা থাকে।
একজন মুসলিমকে ইসলামী সংগঠনের দায়িত্বশীলের
আনুগত্য করা অর্থাৎ নেতার আদেশ শোনা এবং মানা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا
أَطِيعُوا اللَّهَ
وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ
وَأُولِي الْأَمْرِ
مِنْكُمْ
“হে
মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর
ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের।” (সূরা আননিসা:
৫৯)
এ আয়াতের মর্ম হচ্ছে আল্লাহর হুকুম মান্য করা
এবং রাসূল (সঃ) এর আনুগত্য করার ক্ষেত্রে কোনো শর্ত নেই বরং শর্তহীন আনুগত্য করতে
হবে। তবে দায়িত্বশীলের আনুগত্যের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে
আল-হাদিসে বলা হয়েছে দায়িত্বশীল যদি ইসলাম বিরোধী কোনো আদেশ দেন বা নিজের ইচ্ছামত
কোনো আদেশ করেন সে ক্ষেত্রে তার আনুগত্য করা যাবে না। রাসূল (সঃ) বলেন,
لاَ طَاعَةَ
فِي مَعْصِيَةٍ
إِنَّمَا الطَّاعَةُ
فِي الْمَعْرُوفِ
“পাপ
কাজের আদেশ পালনে আনুগত্য নেই বরং আনুগত্য হচ্ছে ভালো কাজে।” (সহীহ আল-বুখারি)
দায়িত্বশীল যদি সৎকাজের আদেশ দেন আর যদি কোনো
জনশক্তি বা কর্মী তার আনুগত্য না করে এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয় তাহলে তার
জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে। এ সম্পর্কে আল-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ أَنَّهُ
قَالَ مَنْ خَرَجَ مِنْ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ
الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ
مَاتَ مِيتَةً
جَاهِلِيَّةً
“হজরত
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূল
(সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য
থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামায়াতবদ্ধ জীবন থেকে পৃথক হয়ে গেল, তার
মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু।” (সহীহ মুসলিম)
দায়িত্বশীলের আনুগত্যের মর্যাদা এতই বাড়িয়ে
দেয়া হয়েছে যে, কেউ যদি দায়িত্বশীলের
আনুগত্য করে তাহলে সে রাসূল (সঃ) এর আনুগত্য করলো এবং যে দায়িত্বশীলের অবাধ্য হলো
সে রাসূল (সঃ)-এর অবাধ্য হলো। এ সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেছেন,
مَنْ أَطَاعَنِي
فَقَدْ أَطَاعَ
اللَّهَ ، وَمَنْ عَصَانِي
فَقَدْ عَصَى اللَّهَ ، وَمَنْ أَطَاعَ
أَمِيرِي فَقَدْ
أَطَاعَنِي ، وَمَنْ عَصَى أَمِيرِي فَقَدْ
عَصَانِي.
“যে আমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহর আনুগত্য করলো, আর যে আমার অবাধ্যতা করলো সে আল্লাহরই অবাধ্য হলো। আর যে আমিরের আনুগত্য করলো সে আমার আনুগত্য করলো আবার যে আমিরের অবাধ্য হলো সে আমারই অবাধ্য হলো।” (সহীহ আল-বুখারি)
وَالْهِجْرَةِ
“ইসলামের
প্রয়োজনে হিজরত করা”
ইসলামের প্রয়োজনে নিজের জন্মভূমি পরিত্যাগ
করে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার নাম হচ্ছে হিজরত। ইসলামের কাজ করতে গিয়ে যদি বাতিলের
পক্ষ থেকে বিরোধিতা আসে এবং সে বিরোধিতা মোকাবিলা করার সামর্থ্য যদি না থাকে তাহলে
আত্মরক্ষা ও ইসলাম প্রচারের স্বার্থে নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ কোনো স্থানে চলে
যাওয়ার বিধান রয়েছে ইসলামে। রাসূল (সঃ)- এর উপরে যখন অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা
সহ্যের বাইরে চলে গিয়েছিলো তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। যা আল-কুরআনে
বর্ণিত হয়েছে,
وَقُلْ رَبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ
صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي
مُخْرَجَ صِدْقٍ
وَاجْعَلْ لِي مِنْ لَدُنْكَ
سُلْطَانًا نَصِيرًا
“আর
বল, হে আমার রব,
আমাকে
(মদিনায়) প্রবেশ করাও উত্তমভাবে এবং (মক্কা থেকে) বের কর উত্তমভাবে। আর তোমার পক্ষ
থেকে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান কর।” (সূরা বনি ইসরাইল: ৮০)
এ নির্দেশের পর রাসূল (সঃ) সাহাবীদের নিয়ে
মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন এবং সেখানে একটা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন।
বর্তমান সময়েও যদি জালিম শক্তির পক্ষ থেকে
মুসলমানদের উপরে এরকম অত্যাচার-নির্যাতন নেমে আসে তাহলে নিজের ঘরবাড়ি থেকে বের হয়ে
নিরাপদ কোন স্থানে গিয়ে দ্বীনের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকার ও দ্বীনের দাওয়াতি কাজ করার
চেষ্টা করতে হবে। এর পরেও দ্বীন থেকে সরে আসা যাবে না। তবে দ্বীনের স্বার্থ ছাড়া দুনিয়াবি
কোন স্বার্থের জন্য হিজরত করলে সে হিজরত হবে দুনিয়াবী যার দ্বারা আখেরাতের স্বার্থ
হাসিল হবেনা। এ সম্পর্কে আল-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
إِنَّمَا الأَعْمَالُ
بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا
لِكُلِّ امْرِئٍ
مَا نَوَى ، فَمَنْ
كَانَتْ هِجْرَتُهُ
إِلَى دُنْيَا
يُصِيبُهَا ، أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا،
فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ
إِلَيْهِ.
“প্রত্যেক
কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল হয়। আর প্রত্যেকে তাই পায় যা সে নিয়ত করেছে। কারো
হিজরতের উদ্দেশ্য যদি দুনিয়া লাভের জন্য হয় তাহলে সে তাই পাবে। অথবা কারো হিজরত
যদি কোনো নারীকে বিবাহ করার জন্য হয়। প্রত্যেকে তাই পাবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত
করেছে।” (সহীহ আল-বুখারি)
আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
وَمَنْ يُرِدْ
ثَوَابَ الدُّنْيَا
نُؤْتِهِ مِنْهَا
وَمَنْ يُرِدْ
ثَوَابَ الْآخِرَةِ
نُؤْتِهِ مِنْهَا
“যে
ব্যক্তি দুনিয়াবি পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে আমি তাকে দুনিয়া থেকেই দেবো। আর যে
ব্যক্তি পরকালীন পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে সে পরকালের পুরস্কার পাবে।” (সূরা
আলে-ইমরান: ১৪৬)
আল্লাহর জন্য বা দ্বীন ইসলামের জন্য হিজরত কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে। এ সম্পর্কে আল-হাদিসে হজরত মুয়াবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সঃ)কে বলতে শুনেছি, হিজরত বন্ধ হবে না যতক্ষণ না সূর্য তার অস্ত যাওয়ার দিক থেকে উদিত হয়। (সুনান আবু দাউদ)
وَالْجِهَادِ
فِي سَبِيلِ اللَّهِ
“আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদ করা”
আল্লাহর জন্য হিজরত করার পরে আল্লাহর জমিনে
আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর রাস্তায়ই জিহাদ করতে হবে, এটা
আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরমান। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী (সঃ)কে জিহাদের
নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,
يَا أَيُّهَا
النَّبِيُّ جَاهِدِ
الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ
وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ
وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ
وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
“হে
নবী, কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর এবং তাদের উপর কঠোর
হও, আর তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম; আর
তা কতই না নিকৃষ্ট স্থান।” (সূরা তওবা: ৭৩)
শুধু রাসূল (সঃ)ই নয় বরং সকল মুসলমানের উপরেই
আল্লাহ তায়ালা এ নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
انْفِرُوا خِفَافًا
وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا
بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ
فِي سَبِيلِ
اللَّهِ ذَلِكُمْ
خَيْرٌ لَكُمْ
إِنْ كُنْتُمْ
تَعْلَمُونَ
“তোমরা
হালকা ও ভারী উভয় অবস্থায় যুদ্ধে বের হও এবং তোমাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম,
যদি
তোমরা জানতে।” (সূরা তওবা: ৪১)
إِنَّ اللَّهَ
يُحِبُّ الَّذِينَ
يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا
كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ
مَرْصُوصٌ
“নিশ্চয়
আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ
হয়ে যুদ্ধ করে যেন তারা সীসাঢালা প্রাচীর।” (সূরা সফ: ৪)
আল্লাহ তায়ালা শুধু জিহাদের জন্য রাস্তায় বের
হতেই বলেননি বরং সকল মুসলমানকে তার সাধ্যমত কাফিরদেরকে ভয় দেখানোর জন্য
শক্তি-সামর্থ্য ও ঘোড়া প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَأَعِدُّوا لَهُمْ
مَا اسْتَطَعْتُمْ
مِنْ قُوَّةٍ
وَمِنْ رِبَاطِ
الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ
بِهِ عَدُوَّ
اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ
وَآخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ
يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
يُوَفَّ إِلَيْكُمْ
وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
“আর
তাদের মোকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত কর, তা
দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে এবং এরা ছাড়া
অন্যদেরকেও, যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ
তাদেরকে জানেন। আর তোমরা যা আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর, তা
তোমাদেরকে পরিপূর্ণ দেয়া হবে, আর তোমাদেরকে জুলুম করা
হবে না।” (সূরা আনফাল: ৬০)
জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর গুরুত্ব সম্পর্কে
আল-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مَنْ مَاتَ وَلَمْ
يَغْزُ وَلَمْ
يُحَدِّثْ بِهِ نَفْسَهُ مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ
مِنْ نِفَاقٍ
“হজরত
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন, যে
ব্যক্তি জিহাদে শরিক হলো না, কিংবা জিহাদ সম্পর্কে কোনো
চিন্তা-ভাবনাও করলো না; আর এ অবস্থায় সে মারা গেল, সে
যেন মুনাফিকের মৃত্যুবরণ করল।” (সহীহ মুসলিম)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ
قَالَ قِيلَ يَا رَسُولَ
اللَّهِ أَيُّ النَّاسِ أَفْضَلُ
فَقَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مُؤْمِنٌ
يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ
“হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূল (সঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, হে
আল্লাহর রাসূল (সঃ)! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কে? উত্তরে
রাসূল (সঃ) বললেন, যে ব্যক্তি তার জীবন ও
সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে।” (সহীহ আল-বুখারি)
যে ব্যক্তি জিহাদে শামিল হয় না তার অন্তরের
মধ্যে শস্যদানা পরিমাণ ঈমান নেই। এ সম্পর্কে আল-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
مَنْ جَاهَدَهُمْ
بِيَدِهِ فَهُوَ
مُؤْمِنٌ وَمَنْ
جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ
فَهُوَ مُؤْمِنٌ
وَمَنْ جَاهَدَهُمْ
بِقَلْبِهِ فَهُوَ
مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ
وَرَاءَ ذَلِكَ
مِنَ الإِيمَانِ
حَبَّةُ خَرْدَلٍ
“যে
ব্যক্তি হাত দ্বারা জিহাদ করলো সে মুমিন,
যে
ব্যক্তি মুখ দ্বারা জিহাদ করলো সেও মুমিন এবং যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা জিহাদ করলো
সেও মুমিন। আর যে ব্যক্তি এর একটাও করলো না তার অন্তরে শস্যদানা পরিমাণ ঈমান নেই।”
(সহীহ মুসলিম)
فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنْ الْجَمَاعَةِ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ
خَلَعَ رِبْقَةَ
الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَا أَنْ يَرْجِعَ
“যে
জামায়াত থেকে এক বিঘত পরিমাণ সরে গেল সে তার গলা থেকে ইসলামের রশিটা সরিয়ে ফেললো।
যতক্ষণ না সে আবার জামায়াতবদ্ধ জীবনে ফিরে আসে।”
হাদিসের উপরোক্ত বক্তব্য থেকে অনুধাবন করা
যায়, জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কখনোই সংগঠন থেকে বিমুখ হওয়া যাবে
না। যদি কেউ সংগঠন থেকে দূরে সরে যায় তাহলে সাথে সাথে আবার সংগঠনের আনুগত্যের
মধ্যে ফিরে আসতে হবে। আর যদি কেউ ফিরে না আসে তাহলে সে ইসলামের রশি তার গলা থেকে
সরিয়ে ফেললো। আল-হাদিসে মুমিনের দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে রাসূল (সঃ) এমনই বলেছেন,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ
عَنْ النَّبِيِّ
صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ مَثَلُ
الْمُؤْمِنِ وَمَثَلُ
الْإِيمَانِ كَمَثَلِ
الْفَرَسِ فِي آخِيَّتِهِ يَجُولُ
ثُمَّ يَرْجِعُ
إِلَى آخِيَّتِهِ
وَإِنَّ الْمُؤْمِنَ
يَسْهُو ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى الْإِيمَانِ
“মুমিন
ও ঈমানের দৃষ্টান্ত হচ্ছে খুঁটিতে বাঁধা ঘোড়ার ন্যায়। যতদূর তার দড়িতে ঠাঁই পায়
ততটুকু সে যায়, আবার খুঁটির নিকট ফিরে
আসে। সে ভুল করে এবং আবার ঈমানের কাছে ফিরে আসে।” (মুসনাদ আহমদ)
অনুরূপভাবে একজন মুমিন যদি সংগঠন থেকে দূরে
সরে যায় তাহলে তাকে আবার সংগঠনের আনুগত্যের মধ্যে ফিরে আসতে হবে অন্যথায় সে
ইসলামের গণ্ডি থেকে দূরে সরে যাবে। তাই আমাদের সব সময় জামায়াতবদ্ধ জীবনের মধ্যে
থাকতে হবে।
وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ
فَهُوَ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ
قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ
وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى قَالَ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ
أَنَّهُ مُسْلِمٌ
“আর
যে জাহিলিয়াতের দিকে মানুষকে আহ্বান করে তাকে জাহান্নামের খড়ি তৈরি করা হবে।
সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সঃ)! সে
যদি নামাজ পড়ে ও রোজা রাখে? রাসূল (সঃ) বললেন, সে
যদি নামাজ আদায় করে, রোজা রাখে এবং নিজেকে
মুসলমান বলে দাবি করে এর পরেও সে জাহান্নামি।”
হাদিসের শেষাংশে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জামায়াতবদ্ধ জীবন থেকে সরে গিয়ে জাহিলিয়াতের দিকে মানুষকে আহবান করবে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। সে যদি নামাজ আদায় করে, রোজা রাখে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে এর পরেও সে জাহান্নামে যাবে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, যে ব্যক্তি জামায়াতবদ্ধ জীবন, দায়িত্বশীলের নির্দেশের আনুগত্য, দ্বীনের স্বার্থে হিজরত ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ থেকে দূরে সরে যাবে সে জাহিলিয়াতের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে। এদের জন্য জাহান্নামের কঠিন শাস্তি রেখে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।
শিক্ষাঃ
(১) একজন মুমিনের দায়িত্ব ও
কর্তব্য হচ্ছে, জীবনের শেষ মুহূর্ত
পর্যন্ত ইসলামী সংগঠনের সাথে থাকা।
(২) দায়িত্বশীলের কথা মনযোগ
দিয়ে শোনা।
(৩) সংগঠনের দায়িত্বশীলের
আনুগত্য করা।
(৪) দ্বীনের স্বার্থে
প্রয়োজনে হিজরত করা।
(৫) সর্বদা জিহাদ ফি
সাবিলিল্লাহর কাজে আত্মনিয়োগ করা।
(৬) হাদীসে উল্লেখিত ৫টি
আদেশ মেনে চলতে পারলে পরকালে আল্লাহর কাছে রয়েছে মহা পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত।
(৭) হাদীসে উল্লেখিত ৫টি
আদেশ মেনে চলতে নাপারলে পরকালে রয়েছে মহা ক্ষতি ও কঠিন শাস্তির ভয়।
সূরা সফের ১০-১২ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا
هَلْ أَدُلُّكُمْ
عَلَىٰ تِجَارَةٍ
تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ﴾ ﴿تُؤْمِنُونَ
بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ
وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ
ۚ ذَٰلِكُمْ
خَيْرٌ لَّكُمْ
إِن كُنتُمْ
تَعْلَمُونَ﴾ ﴿يَغْفِرْ
لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ
وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ
تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً
فِي جَنَّاتِ
عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ
الْعَظِيمُ﴾
হে ঈমান আনয়নকারীগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন
একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দেবো যা তোমাদেরকে কঠিন আযাব থেকে মুক্তি দেবে? তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান আন এবং
আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো এটাই তোমাদের জন্য অতিব
কল্যাণকর যদি তোমরা তা জান৷
আল্লাহ
তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমনসব বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নীচে
দিয়ে ঝর্ণাধারা বয়ে চলবে৷ আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে
সর্বোত্তম ঘর দান করবেন৷ এটাই বড় সফলতা৷
For PDF download click here
0 Comments