আল কুরআনের অর্থনৈতিক নীতিমালা

 কুরআনে মানুষের জীবনে সকল দিক  বিভাগের উপর যেহেতু আলোচনা করা হয়েছে, সেহেতু অর্থনৈতিক নির্দেশনাও কুরআন প্রদান করেছে

 কুরআনে অর্থনীতির আলোচনায় কোন বিষয় মৌলিক, কোন বিষয় বিস্তারিত আবার কোন বিষয় একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে

 কুরআন অর্থব্যবস্থার অকাট্য  সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রদান করেছে

 কুরআনের অর্থনৈতিক নীতিমালা সবাইকে অবগত করণের জন্য মাওলানা মওদূদী রাহ. রচনা করেন কুরআন কী মাআশী তালিমাত

 আল কুরআনের অর্থনৈতিক নীতিমালা বই খানা উপরোক্ত বইয়ের অনুবাদের সাথে তাফহীমূল কুরআনে এই সংক্রান্ত আলোচনা

 গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন আব্দুশ শহীদ নাসিম

 আল কুরআনের অর্থনৈতিক নির্দেশিকা এবং আরো কতিপয় নির্দেশিকা

 নির্দেশিকা মোটঃ ২৮টি; আল কুরআনের অর্থনৈতিক নির্দেশিকাঃ ২২টি, আরো কতিপয় নির্দেশিকাঃ ৬টি



আল কুরআনের অর্থনৈতিক নির্দেশিকা



নির্দেশিকাঃ ২২টি যথাঃ

. মৌলিক তত্ত্ব

 মহান আল্লাহ মানুষের জীবিকা  অর্থনীতির সকল উপায়  উপকরণ সৃষ্টি করেছেন

 

 আল্লাহর এই সব উপায় উপকরণ থেকে ফায়দা লাভের জন্য মানুষকে সুযোগ করে দিয়েছেন

 আল্লাহ মানুষকে উপায় উপকরণ ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন

 কিভাবে, তা কুরআন বর্ণনা করছেঃ

যমীনকে বাধ্যগত  বশীভূত করা হয়েছে (সূরা মূলকঃ ১৫)

যমীনকে বিস্তৃত করা হয়েছে, তাতে পাহাড় বানানো হয়েছে, সমুদ্র  নদ-নদী প্রবাহিত করা হয়েছে (সূরা রাদঃ ৩)

পৃথিবীতে যা আছে, তার সব আমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে (আল বাকারাঃ ২৯)

আসমান, পৃথিবী, বৃষ্টি, জীবিকার জন্য ফল ফলাদি, নৌযান  সমুদ্রকে নিয়ন্ত্রনে রাখা, চন্দ্র সূর্যাকে কল্যাণকর করা-তা সবই আমাদের জন্য (ইব্রাহীমঃ৩২-৩৪)

পৃথিবী কর্তৃত্বের সাথে জীবনের উপকরণ দান (আরাফঃ ১০)

বীজ থেকে গাছ  ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া কেবল আমাদের জন্য (আল ওয়াকিয়াঃ৬৩-৬৪)

যা কিছুর জন্য মানুষ মুখাপেক্ষী-তার সব দিয়েছেন

 

. বৈধ অবৈধ সীমা নির্ধারণের অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহর

 মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত উপায় উপকরণ সমূহ উপার্জন বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাধীন বা স্বেচ্ছাচারী হবার অধিকার রাখেনা

 মানুষের বৈধ অধিকার নেই কোন কিছু খেয়াল খুশী মতো হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ সীমা নির্ধারণের

 হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ সীমা নির্ধারণের অধিকার একমাত্র আল্লাহর

 রুহুল মায়ানীতে বলা হয়েছেঃ যে জিনিস হালাল বা হারাম হবার ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. এর পক্ষ থে েতোমাদের কাছে কোন হুকুমই পৌছেনি, তোমরা সেটাকে হালাল বা হারাম কিছুই বলেবেনা এমনটি করলে তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপকারী বলে গণ্য হবে কেননা আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কিছুই হালাল হারাম নির্ণয়ের মানদন্ড নয়

 এই সীমা নির্ধারণ কুরআন করেছে যেমনঃ

মাদইয়ানবাসীর লাগামহীন উপার্জন আর ব্যয়কে কুরআনে তিরস্কার করা হয়েছে, যারা শুয়াইব আ.কে প্রশ্ন করেছিলঃ তোমার নামায কি আমাদের অর্থ সম্পদের বিষয়ে আমাদের ইচ্ছামতো যা করতে চাই, তা করতে পারবো না বলে নির্দেশ দেয় (হুদঃ ৮৭)

ইচ্ছানুযায়ী কোন জিনিসকে হালাল বা হারাম বলাকে কুরআনে মিথ্যা কথা বলা হয়েছে (আন নাহলঃ ১১৬)

হালাল হারামের নির্দেশ জারির অধিকার কুরআনে কেবলমাত্র আল্লাহ ও তার প্রতিনিধি রাসূলের জন্য খাস করা হয়েছে (আরাফঃ ১৫৭)

. আল্লাহ নির্ধারিত সীমার ভিতরে ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত

 আল্লাহর সার্বভৌম মালিকার অধীনে, আল্লাহ নির্ধারিত সীমার মধ্যে কুরআন ব্যক্তি মালিকানা স্বীকার করে

 এই সীমাটা কি?

o   অবৈধ পন্থায় একে অপরের অর্থসম্পদ ভোগ বা ভক্ষণ করা যাবেনা (নিসাঃ ২৯)

o   ব্যবসা করা যাবে, সুদ নেয়া যাবেনা (বাকারাঃ ২৭৫, ২৭৯)

o   লেন-দেন হবে লিখিত (বাকারাঃ ২৮২)

o   লেনদেনে লিখার সমস্যা থাকলে বন্ধক রাখা (বাকারাঃ ২৮৩)

o   মৃতের সম্পদে পুরুষের সাথে মহিলারও অংশ রয়েছে (নিসাঃ ৭)

o   অন্যের ঘরে ঢুকতে হলে অনুমতি লাগবে (নূরঃ ২৭)

o   আল্লাহর বানানো গৃহপালিত পশুর মানুষ মালিক (ইয়াসিনঃ ৭১)

o   চোরের হাত কাট (মায়িদাঃ ৩৮)

o   ফসল থেকে আল্লাহর অধিকার দাও (আনআমঃ ১৪১)

o   যাকাত দাও (তাওবাঃ ১০৩)

o   এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করোনা (নিসাঃ ২)

o   বিয়ের জন্য মোহর প্রদান করে বৈধতা অর্জন করতে হবে (নিসাঃ ২৪)

o   মোহরানা প্রদানের মাধ্যমে স্ত্রীর মালিকানা নির্ধারিত হয়  বিধায় তালাকের সময় তা ফেরত নেয়া যাবেনা (নিসাঃ ৪,২০)

o   সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা আর তা বরকতময় (বাকারাঃ ২৬১)

o   আল্লাহর রাস্তুায় সম্পদ দিয়ে জিহাদ করতে হয় (আস সফঃ ১১)

o   সাহায্যপ্রার্থী আর বঞ্চিতরা সম্পদে অধিকারী রয়েছে (যারিয়াতঃ ১৯)

 উপরের সকল কাজ করতে সম্পদে ব্যক্তির মালিকানার প্রয়োজন হয়

 কুরআনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানার অধিকারের উপর প্রতিষ্ঠিত

 নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিতে ব্যক্তিমালিকানা, আর উৎপাদন মাধ্যমে জাতীয় করণ এ ধারণা কোন ভিত্তি ইসলামে নাই

 শ্রমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ আর বিনা শ্রমে অর্জিত সম্পদের মাঝে মালিকানার অধিকারে ইসলামে কোন পার্থক্য নেই

 বিনা শ্রমে অর্জিত সম্পদের উদাহরণঃ

o   উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ

o   যাকাতের মাধ্যমে প্রাপ্ত সম্পদ

 কুরআনের সূরা আরাফের ২৮ নম্বর আয়াত, সূরা বাকারার ১৮৪ নম্বর আয়াত কোনটাই ব্যক্তিগত মালিকানাকে কোন অবস্থায়ই বাতিল করেনা  

 সূরা হা-মীম-আস সাজদার ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ আর তিনি তাকে পূর্ণ চারদিনে প্রার্থীদের প্রত্যেকের প্রয়োজন পমিাণ খাদ্য সামগ্রী সঞ্চিত করে রেখেছেন- ﴿ وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاءً لِّلسَّائِلِينَ﴾

o   জাতীয় মালিকানার দাবীদারগন এই আয়াতের অর্থ করেন এভাবেঃ কুরআন পৃথিবীর সমুদয় খাদ্য উপকরণকে সকল মানুষে জন্যে সমবন্টন করতে চায়, আর এ সাম্য জাতীয় মালিকানা ছাড়া প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় সুতরাং জাতীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করাই কুরআনের লক্ষ্য

o   যদি আমরা এই আয়াতের মর্ম এটা ধরেও নেই, তবুও কথা হচ্ছেঃ আল্লাহ পৃথিবীতে খাদ্য উপকরণ সমূহ চারদিনে একটি পরিমাণ মতো রেখে দিয়েছেন, যা সব প্রার্থীর জন্য সমান সমান,. এখানে সবপ্রার্থী বলতে কেবল মানুষ নয় আর সাম্য কেবল মানুষের বেলায় হবার দলীল নাই

o   কুরআসে বিভিন্ন স্থানে অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে বলা হয়েছে এর অর্থ এটা নয় যে, এর মাধ্যমে জাতীয় মালিকানার কথা বলা হয়েছে

o   আল্লামা যমখশরী আয়াতের ভিন্ন অর্থ করেছেনঃ পূর্ণ চারদিনে আল্লাহ এ কাজে করেছেন অন্যরা অর্থ করেছেনঃ সব প্রার্থীর জন্য সরবরাহ করেছেন বা সব প্রার্থীর প্রার্থনা অনুযায়ী

 কোন জিনিসকে ব্যক্তি মালিকানা থেকে জাতীয় মালিকানায় নিতে হলে কুরআন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনা

 ব্যক্তি মালিকানাকে অস্বীকার এবং জাতীয় মালিকানা নামে আরেকটা দর্শন হিসাবে গ্রহণ কুরআনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সাথে সাংঘর্ষিক

 ব্যক্তি মালিকানা বা জাতীয় মালিকানার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলের কাজ নয় বরং কুরআনের রাজনৈতিক প্রস্তাবনার আলোকে গঠিত রাষ্ট্রের মজলিসে শুরাই সিদ্ধান্ত নেবে  

. অর্থনৈতিক সাম্যের অস্বাভাবিক ধারণা

 জীবিকা ও জীবন উপকরণের সমতার নাম সাম্য নয় 

 প্রাকৃতিক অসাম্যকে কুরআন আল্লাহর কৌশলগত বিবেচনা ও বন্টন ব্যবস্থার ফলশ্রুতি বলেছে

 কুরআন এই অসাম্যতাকে নির্মূল করার কোন কথা বলেনি যেমনঃ

o   মানুষকে পৃথিবীতে খলিফা বানানো, একজনের উপর আরেকজনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান-এগুলো মানুষের জন্য পরীক্ষা (আনআমঃ ১৬৫)

o   কিছু লোকের উপর কিছু লোকের মর্যাদা দান করা হয়েছে-পরকালীন মর্যাদার পার্থক্যটা আরো বেশী (বনী ইসরাঈলঃ ২১)

o   পার্থিব জীবনে জীবিকাকে বন্টন করে দেয়া হয়েছে কিছু লোকের উপর কিছু লোকের মর্যাদা দেয়া হয়েছে, যাতে এক পক্ষ আরেক পক্ষ দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে (যুখরুফঃ ৩২)

o   আল্লাহ কারো জীবিকা প্রশস্ত করেন, আর কাউকে মেপেমেপে দেন (বনী ইসরাঈলঃ ৩০, আশ শুরাঃ ১২, আস সাবাঃ ৩৯)

 কুরআন প্রাকৃতিক অসাম্যকে ঠান্ডা মাথায় মেনে নিতে উপদেশ দেয় যেমনঃ সুরা নিসা-৩২, আন নাহলঃ ৭১, রুমঃ ২৮)

o   তাওহীদের পক্ষে এবং শিরকের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে বলা হয়েছে, তোমরা যখন আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকার মধ্যেই তোমাদের ভৃত্যদেরকে নিজেদের সমান অংশীদার বানাতে প্রস্তুত নও, তখন আল্লাহ সম্পর্কে এ ধারণা কেমন করে পোষণ কর যে, তাঁর সৃষ্টি খোদায়ীতে কেউ অংশীদার হতে পারে? –এর দ্বারা জীবিকার মাঝে অসাম্যটাকে অস্বীকার করা হয়নি বরং বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে

. বৈরাগ্যনীতির পরিবর্তে মধ্যপন্থা এবং বিধিনিষেধ

 আল্লাহ পৃথিবীর যাবতীয় নিয়ামত সৃষ্টি করেছেন তার বান্দাদের ভোগ ব্যবহারের জন্য-এই কথাটা কুরআন খুব গুরুত্ব দিয়ে বারবার বর্ণনা করেছে যেমনঃ সূরা বাকারাঃ ২৯, আরাফঃ ৩২, আল মায়িদাঃ ৮৮)

 আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ামতের পরিত্যাগ করে বৈরাগ্যবাদনীতি গ্রহণ-কুরআনের নীতির পরিপন্থী যেমনঃ আল হাদীদঃ ২৭ আল্লাহ বলেছেন, তা তিনি লিখে দেননি

 আল্লাহ চান, মানুষ পবিত্র এবং অপবিত্র, বৈধ এবং অবৈধ পথের মাঝে পার্থক্য করবে মানুষ কেবল হালাল ও পবিত্রতার মাঝে তার ভোগ, ব্যবহার, লাভ ও স্বার্থকে সীমিত রেখে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে যেমনঃ সূরা বাকারাঃ ১৬৮, আরাফঃ ৩১)

. অর্থ সম্পদ উপার্জনে হারাম হালালের বিবেচনা করা

 কুরআনের নির্দেশ হচ্ছে, সম্পদ কেবলমাত্র বৈধ পন্থায় অর্জন করতে হবে, অবৈধ পন্থা সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয়

 কুরআনের সূরা নিসাঃ ২৯ আয়াতে অন্যায় ভাবে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ না করতে বলা হয়েছে সাথে ব্যবসা করতে বলা হয়েছে পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে

 কুরআনে তিরারত শব্দ বলা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে আদান প্রদানের ভিত্তিতে দব্যসামগ্রী এবং সেবা বিনিময় করা

 পারস্পরিক সন্তুষ্টি বলতে বুঝা যায়, এই তিজারতে কোন দমনপীড়ন, ধোঁকা, প্রতারণা বা ছলচাতুরী থাকবেনা

. অর্থ সম্পদ উপার্জনে অবৈধ পন্থা

 কুরআনে অর্থ উপার্জনের অবৈধ পন্থা সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে নিম্নরূপঃ

. অর্থ সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ না করা (সূরাবাকারাঃ ১৮৮)

. আস্থা স্থাপনকারী আমানত যেন ফেরত দেয়া হয় (সূরা বাকারাঃ ২৮৩)

. আত্মসাত বা খিয়ানত করা যাবেনা (সূরা আলে ইমরানঃ ১৬১)

. চোর পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্য রয়েছে হাত কাটার মতো শাস্তির বিধান (আল মায়িদাঃ ৩৮)

. ডাকাতি রাহাজানির মতো অপরাধের কঠিন শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হয়েছে (আল মায়িদাঃ৩৩)

. এতীমের মাল আত্মসাৎকারীর পরিণতি জাহান্নাম (আন নিসাঃ ১০)

. ওজনে কমদানকারী ঠকদের তিরস্কার করে বলা হয়েছে ধ্বংস ঠকবাজদের জন্য (আল মুতাফ্ফিফিনঃ ১-)

. অশ্লীলতা বেহায়পনার সহযোগী কাজে অর্থ ব্যয়কারীর শাস্তি দুনিয়া এবং আখেরাতে উভয় স্থানে (আন নুরঃ ১৯)

. গান, বাদ্য, গল্পগুজন ও খেলাধুলা-যা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে, এমন মাধ্যমে উপার্জন করা যাবেনা এর জন্য অপমানকর শাস্তি আছে (লুকমানঃ৬)

১০. পতিতাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জন বৈধ নয় (আন নূরঃ ৩৩)

১১. ‍যিনার যেমন অপরাধ, যিনার মাধ্যমে উপার্জনও হারাম যিনার জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে (আন নুরঃ ২)

১২. মদ, জুয়া, আস্তানা, পাশা এসব শয়তানী কাজের মাধ্যমে উপার্জন নয় যা নিষিদ্ধ, তার ব্যবসাও নিষিদ্ধ  (আল মায়িদাঃ ৯০)

১৩. ব্যবসা করতে হবে সূদমুক্ত ভাবে সূদের সাথে সম্পৃক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ ঘোষনার শামীল (আল বাকারাঃ ২৭৫, ২৭৮-২৮০)

১৪. ব্যবসাতে জুলুম করা যাবেনা (বাকারাঃ ২৭৮-২৮০)

 কুরআনের এই সব বর্ণনা অর্থ লাভের জন্য যে সব পন্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে তা হলোঃ

. কারো সম্পদ ইচ্ছা ও বিনিময় ছাড়া গ্রহণ করা

. ঘুষ

. জবরদখল, লুন্ঠন ও আত্মসাত

. খিয়ানত

. চুরি, ডাকাতি

. এতিমের সম্পদের বল্গাহীন ব্যবহার

. মাপ ও ওজনে কমবেশী করা

. অশ্লীলতা

. গান বাজনা

১০. পতিাতবৃত্তি

১১. মদ

১২. জুয়া

১৩. মূর্তি তৈরী, বিক্রয়, মন্দির ব্যবসা

১৪. ভাগ্য গননা

১৫. সূদ

. কার্পণ্য  পুঞ্জিভূত করার উপর নিষেধাজ্ঞা

 কুরআন সম্পদ লাভের অবৈধ পন্থা যেমন নিষিদ্ধ করেছে তেমনি,

 কুরআন বৈধ ভাবে উপার্জিত সম্পদ পুঞ্জিভূত করে রাখার নিন্দা করেছে  যেমনঃ কুরআনে কার্পন্যকে বলা হয়েছে এক জগন্য মন্দ কাজ (সূরা হুমাযাঃ ১-, আত তাওবাঃ ৩৪, আত তাগাবুনঃ ১৬,  আলে ইমরানঃ ১৮০)

. অর্থপূজা  লোভ লালসার নিন্দা

 কুরআনের শিক্ষা হচ্ছে অর্থপূজা, বৈষয়িক অর্থসম্পদের প্রতি আসক্তি এবং প্রাচূয্য-এসব বস্তু গর্ব অহংকারের সৃষ্টি করে, যা মানুষের ধ্বংসের কারণ যেমনঃ

o   সূরা তাকাসুরঃ অধিক সম্পত্তির চিন্তা চরমভাবে নিমগ্ন করে রাখে, এমনকি এ অবস্থায় তোমরা কবর পর্য্ন্ত চলে যাও (তাকাসুরঃ ১-)

o   এমন বহু জনপদকে ধ্বংস করা হয়েছে, যার অধিবাসীরা সম্পদের গর্বে অহংকারী ছিল (আল কাসাসঃ ৫৮)

o   সকল নবীর সময়ে সম্পদশালীরা তাদের সম্পদের অহংকারের কারণে নবীদের বিরুধীতা করেছে (আস সাবাঃ ৩৪-৩৫)

১০. অপব্যয়ের নিন্দা

 কুরআন বৈধ সম্পদ অবৈধ ভাবে ব্যয় বা উড়িয়ে দিতে নিষেধ করেছে

 বিলাসিতা, আমোদ প্রমোদ, আনন্দ উপভোগ, লাইফ স্ট্যাটাস বাড়ানোর ধান্দায় বল্গাহীন অর্থব্যয় যেমনঃ

o   অর্থব্যয়ে সীমালংঘন না করা (আনআমঃ ১৪১, আরাফঃ ৩১)

o   অপব্যয় না করা কারণ অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই (বনী ইসরাঈলঃ ২৬-২৭)

 কুরআনের হেদায়াত অনুযায়ী সম্পদ ব্যয়ের সঠিক পথ হলো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন

 সম্পদ ব্যয়ে মনে রাখা যে, এই সম্পদে নিজের ও পরিবারের অন্যান্যদের হক রয়েছে

 অধিকার প্রদানে কৃপণতা যেমন করা যাবেনা, তেমনি এক অধিকার প্রদান করতে অন্যকে বঞ্চিত করা যাবেনা

 কুরআনের নির্দেশ হলোঃ

o   কৃপনতা করোনা, অপব্যয়ও করো না (বনী ইসরাইলঃ ২৯)

o   কৃপনতা করোনা, সীমালংঘন করোনা, মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো (আল ফুরকারনঃ ৬৭)

o   সম্পদের মাধ্যমে আখেরাতের কল্যাণ, দুনিয়ার কল্যাণ, সৃষ্টির কল্যাণ করা (আল কাসাসঃ ৭৭)

১১. অর্থব্যয়ের সঠিক খাত

 খরচের পর যে অর্থ হাতে থাকে, তা ব্যয় করতে হবে নিম্নোক্ত খাতেঃ

o   আল্লাহর পথে

o   পিতামাতার জন্য

o   আত্মীয়দের জন্য

o   এতীমদের জন্য

o   মিসকিনদের জন্য

o   অভাবী লোকদের জন্য।

o   প্রতিবেশীদের জন্য

o   সাথী বন্ধুদের জন্য

o   পথিকদের জন্য

o   অধীনস্ত ভৃত্যদের জন্য

o   সাহায্যপ্রার্থীদের জন্য

o   বঞ্চিতদের জন্য।

o   গোলামী থেকে মুক্তির জন্য

o   ফিদিয়া পরিশোধের জন্য।

o   বন্দীদের জন্য

o   আল্লাহর পথের সার্বক্ষনিক কর্মীদের জন্য

o   এমন লোক, যাদের ব্যক্তিত্ব আর আত্মসম্মানবোধের জন্য লোকেরা তাদেরকে সচ্ছল মনে করে-তাদের জন্য

o   লোকদের দেখানো জন্য নয়, এমন খাতে।

 আল্লামা যমখশরী তাফসীরে ইবনে কাশশাফে বর্ণনা করেন, আল্লাহর কাজে এমন ভাবে জড়িয়ে পড়েছে এমন লোক, যারা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবিকা উপার্জনের সুযোগ পায় না-এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে রাসূল সা. এর এমন ৪শ সাহাবী, যাদেরকে রিজার্ভ হিসাবে বিভিন্ন কাজের জন্য আরবের বিভিন্ন এলাকা মদীনায় নিয়ে আসা হয় তারা তাদের নিজের বাড়ীঘর ত্যাগ করে মদীনায় হাজির হোন যাদের কাজ ছিল দ্বীনের জ্ঞান লাভ, দ্বীন প্রচার, দ্বীনের শিক্ষা দান এবং জিহাদে অংশ গ্রহণ আর এজন্য তারা সার্বক্ষনিক রেডি থাকতেন

১২. আর্থিক কাফ্ফারা

 কুরআন সাধারণ ও স্বেচ্ছামূলক দানের সাথে কিছু কিছু গোনাহ ও দোষত্রুটির ক্ষতিপূরণের জন্য আর্থিক কাফ্ফারার ব্যবস্থা করেছে যেমনঃ

o   কসম করার পর তা ভংগ করলে-১০জন মিসকিনকে খাওয়ানো বা পরিধানের পোষাক প্রদান বা দাস মুক্ত করণ আর যার সামর্থ নাই, তার জন্য ৩দিন রোযা রাখা

o   নিজের স্ত্রীকে মা বা বোনের সাথে তুলনা করে নিজের জন্য হারাম করে নিলে-একজন দাস মুক্ত করা অথবা লাগাতার ২মাস রোযা রাখা, নতুবা ৬০জন মিসকিনকে খাওয়ানো

o   হজ্জের ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য দম প্রদান করতে হয় অথবা মিসকিনকে খাওয়াতে হয় নতুবা রোযা রাখতে হয়

o   রোযার ক্ষেত্রে-ফিদিয়া প্রদান তথা একজন মিসকিনকে খাওয়ানো

১৩. দান কবুল হওয়ার আবশ্যিক শর্তাবলী

 দান কবুল হওয়া তথা আল্লাহর পথে ব্যয় বলে তখন বিবেচ্য হবে, যখনঃ

. দানের মাধ্যমে কোন স্বার্থ হাসিলের চিন্তা থাকবেনা

. দান আত্ম প্রচারের জন্য হবেনা

. দানের মাধ্যমে প্রদর্শনেচ্ছা থাকবেনা

. দান করে খোটা দেয়া হবেনা

. দানের মাধ্যমে কষ্ট দেয়া হবেনা

. ভাল রেখে খারাপ মাল দান করা হবেনা

. দান আল্লাহর ভালবাসা ও সন্তুষ্টির জন্য হবে

. আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার হতে হবে

১৪. আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ের বাস্তব গুরুত্ব

 আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ের কুরআনিক পরিভাষা হচ্ছেঃ

. ইনফাক

. ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ

. সাদাকা

. যাকাত

 আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় শুধু নেক আর ভাল কাজ নয়, এটা ইবাদত এবং ইসলামের ৫স্তম্বের ১টি

 কুরআনে ৩৭বার নামাযের সাথে সাথে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ের গুরুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে

 যাকাত সব সময় ইসলামের স্তম্ভ ছিল  ছিল হযরত ইব্রাহীম, ইসমাঈল, লুত, ইসহাক ও ইয়াকুব, ঈসা. . এর সময়ে ছিল আহলে কিতাবের প্রতি নির্দেশ  ওয়াদা ছিল বনী ইসরাঈলের

 মুহাম্মদ সা. তালিমের মাঝে ঈমান, নামাযের পরই যাকাত ও আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় অপরিহায্য

 যাকাত কেবল সমাজের কল্যাণের জন্য নহে বরং যাকাত দাতার আধ্যাত্মিক উন্নতি, নৈতিক সংশোধন এবং সাফল্য ও মুক্তির জন্য

 যাকাত কোন ট্যাক্স নয়, বরং একটি ইবাদত

 কুরআনে হাকীম মানুষের তাযকিয়ার জন্য যে সব বিধিবদ্ধ আইন প্রদান করেছে, যাকাত তার মাঝে একটি অপরিহায্য অংগ  যেমনঃ

o   তাদেরকে পবিত্র কর, তাদের প্রসংশনীয় বিকশিত কর, তাদের কল্যাণের দোয়া কর

o   নিজেদের প্রিয়বস্তু ব্যয় না করা অবধি কল্যাণ লাভ করা যাবেনা

o   দানে রয়েছে নিজেদের কল্যাণ এতে মনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সাফল্য আসে

১৫. আবশ্যিক যাকাত  তার ব্যাখ্যা

 দানের একটি নূন্যতম সীমা নির্ধারণ করে তা ফরয করা হয়েছে, যা ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আদায় ও বন্টন করা হবে

 সেই সীমা হচ্ছেঃ

. সোনা, রূপা ও নগদ অর্থ এবং বানিজ্যিক সম্পদেঃ ২.%

. জমির উৎপাদিত ফসল-যা সেচ বিহীনঃ ১০%

. জমির উৎপাদিত ফসল-যা সেচের মাধ্যমেঃ ৫%

. ব্যক্তি মালিকাধীন খনিজ সম্পদ এবং প্রোথিত সম্পদেঃ ২০%

. গৃহপালিত পশু এবং ব্যবসায়িক পশুতেও যাকাত নির্ধারিত

 রাসূল সা. যেমন নামাযের রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তেমনি তিনি যাকাতের নেসাবও ঠিক করে দিয়েছেন

 সালাত ও যাকাত হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক উদ্দেশ্য সমূহের অন্যতম

 কোথাও যদি ইসলামী রাষ্ট্র বিদ্যমান না থাকে এবং মুসলিম সরকারও যাকাত আদায়ে উদ্যোগী না হয়, তবুও মুসলমানদের উপর যাকাতের এই ফরয রহিত হয়না

 নামায যেভাবে কোন অবস্থায়ই ছাড়ার সুযোগ নেই একই ভাবে ইসলামী হুকুমাত না থাকলে মুসলমানদেরকে নিজ দায়িত্বে নেসাব অনুযায়ী হিসাব করে যাকাত প্রদান করতে হবে

১৬. মালে গনীমতের এক পঞ্চমাংশ

 ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুলমালে যাকাতের মাধ্যমে যে তহবিল গঠন করা হয়,  কুরআন তার সাথে আরেকটি আয় সংযুক্ত করে, তার নাম মালে গনীমতের এক পঞ্চমাংশ

 যুদ্ধের মাধ্যমে শত্রু পক্ষ হতে যে মাল লাভ করা যায়, তা ব্যক্তিগত ভাবে কোন সৈনিক লুঠে নিতে পারেননা বরং সেখানেও রয়েছে ইসলামের একটি সুষ্ঠু বন্টন প্রক্রিয়া

 গনীমতের মাল সব জমা হবে যুদ্ধের সেনাপতির কাছে সেনাপতি জমা হওয়া সকল সম্পদ ৫ভাগ করবেন এবং তার ৪ভাগ যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সৈনিকদের মাঝে ইনসাফ অনুযায়ী বন্টন করবেন আর  ভাগ রাষ্ট্রের বাইতুলমালে জমা হবে

 সেনাপতি সেই মাল ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুলমালে জমা করবেন  তাতে থাকবে ৫টি অংশ . আল্লাহ . রাসূল . আত্মীয় স্বজন . এতীম . মুসাফির

 রাসূল সা. তার জীবদ্দশায় গনিমতের মালের এক পঞ্চমাংশ নিজের এবং নিজের সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজন পুরণে গ্রহণ করতেন কারণ যাকাতে তার  তার আত্মীয়দের কোন অংশ ছিলনা

 রাসূলের ইনতিকালের পর তার অংশ পান রাষ্ট্রপ্রধান কিন্তু এতে মতবিরোধ আছে কেহ কেহ মনে করেন, তা প্রাপ্ত হবেন রাসূলের আত্মীয় স্বজন আর তা না থাকলে ব্যয় হবে রাষ্ট্রের শামরিক খাতে

১৭. যাকাত ব্যয়ের খাত

 যাকাত ও গনীমত রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হলেও তা কোষাগারের অংশ নয় বরং তা ব্যয় হয় নির্দিষ্ট খাতে আর রাষ্ট্রীয় অর্থ যাকাত দাতার কল্যাণেও ব্যয় হবার সুযোগ রয়েছে

 কুরআন যাকাতের তহবিলের ব্যয়ের খাত নির্দিষ্ট কর দিয়েছে আর তা হলোঃ

. ফকীরঃ যে প্রয়োজনের কম জীবিকা লাভ করার কারণে সাহায্যের মুখাপেক্ষী

. মিসকীনঃ

o   মিসকিন সেই ব্যক্তি, যে উপার্জন করতে পারেনা বা উপার্জনের সুযোগ পায় না  (হযরত উমর)

o   এই সংগার আলোকে সে সব গরীব শিশু, যারা উপার্জনের যোগ্য হয়নি, বিকলাংগ, বৃদ্ধ, বেকার, রোগী-এরা সবাই মিসকিন

. যাকাত আদায় কাজের কর্মকর্তা কর্মচারী

. ইসলামের প্রতি মন আকৃষ্টকারীদের জন্যঃ  এরা ৩ ধরণের লোক যথাঃ

o   ইসলাম বিরোধী ব্যক্তি, যারা দূর্বল মুসলমানদের কষ্ট দিত

o   যারা শক্তি প্রয়োগ করে নিজ গোত্রের লোকদের ইসলাম গ্রহণে বাঁধা দিত

o   যে সব নতুন ইসলাম কবুল করতো

. দাস মুক্তিঃ দাস মুক্তির বিষয়টি যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য-

. সেই সব মুসলমান, বিভিন্ন যুদ্ধে শত্রুরা যাদেরকে বন্দি করে দাস বানিয়ে নিয়েছে

. সেই সব অমুসলিম, যারা মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়ে ফিদইয়া দিয়ে মুক্তি লাভেল চেষ্টা করে

. সেই সব দাস, যারা পূর্ব থেকে দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ আছে

. ঋণগ্রস্থ

. আল্লাহর পথেঃ আল্লাহ পথে বলতে জিহাদ ও হজ্জ  

o   স্বেচ্চাসেবী মুজাহিদ, যার প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহের তাওফীক আছে তবুও তিনি যাকাত গ্রহণ করতে পারবেন

o   হজ্জের সফরে যদি কারো টাকা পয়সা শেষ হয়ে যায়, তিনি সামর্থবান হলেও যাকাতের অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন

. পথিকদের জন্যঃ পথিক যদি নিজ এলাকায় ধনী ও সামর্থবান হোন, কিন্তু সফরকালে তিনি যদি সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েন তাহলে তিনি যাকাত লাভের অধিকারী হবেন

১৮. উত্তরাধিকার আইন

 কুরআনের বিধান হচ্ছে, যদি কেউ ইনতিকাল করেন, তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির মালিক হবেন তার পিতামাতা, ছেলেমেয়ে এবং স্বামী বা স্ত্রী

 পিতামাতা ও ছেলে মেয়ে না থাকলে সহোদর, বৈমাত্রিক, বৈপিতৃক ভাইবোনও মরহুমের সম্পত্তিতে অংশীদার হতে পারেন

 এর জন্য রয়েছে বন্টনের একটি সুষ্টু বিধান রাসূল সা. এই নিয়মের যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, তার সারকথা হচ্ছেঃ পিতামাতা বা ছেলে মেয়ে না থাকলে ভাইবোন পাবে যদি তাও না থাকে, তাহলে নিকটাত্মীয় পাবে, যে অনাত্মীয়ের চেয়ে নিকটাত্মীয়

 যদি কোন ধরণের আত্মীয় পাওয়া না যায়, তাহলে মরহুমের সম্পত্তি ইসলামী রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা হবে

 কুরআনের এই মূলনীতির লক্ষ্য হলো, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিকে কেন্দ্রীভূত করে না রেখে আত্মীয় স্বজনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া

 ইসলামের উত্তরাধিকার আইন বড় পুত্রের বা জৈষ্ঠত্বে উত্তরাধিকার প্রথা অথবা যৌথ পারিবারিক সম্পত্তি প্রথা বা এই ধরণের নানাবিধ প্রথার বিরুধী

 ইসলাম পালক পুত্র গ্রহণের প্রথাকে অস্বীকার করে বিধায় পালকপুত্র মরহুমের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হবে না

 উত্তরাধিকারী নয় এমন আত্মীয়দের সন্তুষ্ট চিত্তে কিছু উপহার দেয়ার জন্য ইসলাম উৎসাহিত করে

১৯. অসীয়াতের বিধান

 ইসলাম মৃত্যুর সময়ে অসীয়ত করার উপদেশ প্রদান করে

 অসিওত হবে বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য, আত্মীয় স্বজনের জন্য

 অসিওতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সন্তানরা যাতে দাদাদাদীদের সাথে ভাল ব্যবহার করে আত্মীয়দের সাথে ভাল ব্যবহার করে

 অসিওত করা যাবে জনকল্যাণ মূলক কাজের জন্য

 নিজেদের আত্মীয় স্বজনকে দরিদ্র ও পরমুখাপেক্ষী রেখে জনকল্যাণ মূলক ব্যয় করা পছন্দনীয় নয়

 রাসূল সা. এর উক্তিঃ তোমরা উত্তরাধিকারীকে সুহালে রেখে যাওয়াটা, মুখাপেক্ষী ও পরের কাছে হাত পাততে হবে-এমন অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম

 ইসলামের অসিওত ও উত্তরাধিকার আইনে ব্যক্তিমালিকানার পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে ইসলামে স্কীম হলোঃ

o   সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ উত্তরাধিকার আইনে বন্টন করা হবে

o   সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ মৃত্যুমুখী ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যয় হবে মৃতের অসিওত হতে হবে ভাল কাজের জন্য কারো স্বার্থে আঘাত করে এমন অসিওত করা যাবেনা

o   যারা আইনগত উত্তরাধিকারী, তাদের জন্য অন্য উত্তরাধিকারীদের অনুমতি ছাড়া অসীয়াত করা যাবেনা

o   কোন উত্তরাধিকারীকে তার উত্তরাধিকার থেকে বা তার অংশ কম করার অসীয়াত করা যাবেনা

২০. অজ্ঞ  নির্বোধদের স্বার্থ সংরক্ষণঃ 

অজ্ঞ বা নির্বোধ লোক, যাদের ব্যাপারে আশংকা হয় যে, যারা নিজেদের মালিকাধীন অর্থ সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার জানেনা বা যারা ব্যবহার না জানার কারণে সম্পদ খোয়াতে থাকে অথবা যারা ব্যবহার না জানার কারণে তাদের সম্পদ খুইয়ে ফেলবে তাদের ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশ হচ্ছে,

-         তাদের হাতে তাদের সম্পদ ছেড়ে দেয়া যাবেনা

-         তাদের সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য অভিভাবক বা কাজীর উপর ছেড়ে দিতে হবে

-         তাদের হাতে সম্পদ তখনই ছেড়ে দিতে হবে, যখন আশ্বস্ত হওয়া যাবে যে, তারা সম্পদকে সঠিক ভাবে ব্যবহারের উপযুক্ত

-         এই ধরণের লোকদের সম্পদ থেকে তাদের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা যাবে

২১. জাতীয় মালিকানায় সমাজের স্বার্থ সংরক্ষণ

 রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পদের ব্যয় ও ভোগ ব্যবহার কেবলমাত্র অর্থশালী মানুষের স্বার্থে হবে না বরং সাধারণ মানুষের স্বার্থে হতে হবে দূর্বল শ্রেণীর মানুষের কল্যাণে হতে হবে

 কুরআন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা খাতের একটি ব্যয় খাত নির্ধারণ কর রাসূল সা. ও খলিফাগন সেখান থেকে ভাতা গ্রহণ করতেন  সরকারী কর্মচারীদের সেখান থেকে বেতন প্রদান করা হতো তবে যাকাত ফান্ডের কর্মচারদের বেতন ভাতা যাকাত ফান্ড থেকে প্রদান করা হতো

২২. করারোপের ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি

 করারোপে ক্ষেত্রে কুরআনের মূলনীতি হচ্ছে, করের বোঝা কেবল তাদের উপর চাপবে, যারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের মালিক

 কর কেবল সম্পদের সেই অংশেই আরোপিত হবে, যে সম্পদ প্রয়োজনের পর উদ্বৃত্ত

২৩. ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট

 কুরআন অর্থনৈতি জীবনের জন্য ২২ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছে
১.অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠাঃ

অর্থনৈতিক জুলুম বন্ধ হয়।
          বল্গাহীন লাভ ও দখলদারী রুদ্ধ হয়।
          সমাজে উত্তম নৈতিক গুনাবলী বিকশিত হয়।
কুরআন িএমন সমাজ কায়েম করতে চায়না, যেখানে ব্যক্তিগত ভাবে কল্যাণ করা যাবেনা।
কুরআন এমন সমাজ কায়েম করতে চায়, যেখানে পারস্পরিক প্রীতি ও ভালবাসার প্রসার ঘটবে দানশীলতা সহানুভূতি দয়া অনুগ্রহে মাধ্যমে।
কুরআন এ কাজ করতে চায় ৪টি কাজের মাধ্যমে। ১. ঈমান। ২. জ্ঞান। ৩. প্রশিক্ষণ। ৪. আইন প্রয়োগ।
২. অর্থনৈতিক মূল্যবোধ-এর ভিত্তি আল্লাহর দাসত্বের উপরঃ
  অর্থনৈতিক ও নৈতিক মূল্যবোধকে পৃথখ করেনি।
  অর্থনৈতিক সমস্যাকে কেবল অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে সমাধান না করে একে পুরো ইমারাতের একটা অংশ বানানো হয়েছে।
৩. অর্থনৈতিক উপায় উপকরণ আল্লাহর অনুগ্রহ ও দানঃ অর্থনৈতিক উপায় উপকরণকে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দান বানানো হয়েছে। ফলে আধিপত্যবাদ খতম করে সকল মানুষের জন্য উম্মুক্ত করা হয়েছে।
৪. ব্যক্তিমালিকানার নিয়ন্ত্রিত ও দায়বদ্ধ অধিকারঃ ব্যক্তি মালিকানার অধিকার দিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রিত ও দায়বদ্ধ করা হয়েছে।
৫. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালনায় স্বাধীনতাঃ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালনায় স্বাধীন চেষ্টা সাধনাকে অনুমোদন দিয়ে তা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। 
৬. নারী পুরুষের পৃথক মালিকানা নিশ্চিতঃ নারী ও পুরুষের পৃথক মালিকানা নিশ্চিত করা হয়েছে।
৭. অপচয় ও কৃপনাতার ভারসাম্যঃ অপচয় ও কৃপনতার মধ্যে ভারসাম্য আনা হয়েছে।
৮. অর্থনৈতি সুবিচার প্রতিষ্ঠাঃ
  ভ্রান্ত ও অবৈধ উপায় অবলম্বন যেন না হয়।
  সম্পদ যাত েএক স্থানে পুঞ্জিভূত না হয়।
  সম্পদ যাতে আন-প্রোডাকটিভ না থাক।ে
  সম্পদের বেশী বেশী ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
  আবর্তনের ফলে বঞ্চিতরা সুযোগ পায়।
৯. অর্থনৈতিক সুবিচারে মানসিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণঃ অর্থনৈতিক সুবিচারের জন্য আইন ও রাষ্ট্রের পরিবর্তে মানসিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণ এবং সমাজ সংশোধনের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
১০. পেশাগত সংঘাতের কারণ নিমূলঃ পেশাগত সংঘাত সৃষ্টির পরিবর্তে কারণ নির্মূল করে সাহায্য সহযোগিতা ও সহমর্মিতা স্পিরিট সৃষ্টি করা হয়েছে।

আরো কতিপয় নির্দেশিকা

. ইসলামী সমাজের তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট

. নৈতিক  অর্থনৈতিক উন্নতির ইসলামী পদ্ধতি

. জীবিকার ধারণা এবং ব্যয়ের দৃষ্টিভংগী

. ব্যয়ের মূলনীতি

. মিতব্যয়ের মূলনীতি

. অর্থনৈতিক সুবিচার